০১:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বামপন্থি জোট এগিয়ে শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে

  • আপডেট: ০৯:২৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 40

শ্রীলঙ্কায় গণ-বিক্ষোভের মুখে রাজাপাকসে সরকারের পতনের পর অনুষ্ঠিত প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে এগিয়ে রয়েছেন দেশটির বামপন্থি ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) অ্যালায়েন্সের প্রার্থী অনুরা কুমারা দিসানায়েক। রোববার সকাল পর্যন্ত গণনা শেষ হওয়া দশ লাখ ভোটের মধ্যে দিসানায়েকে প্রায় ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বলে শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রাথমিক ফলাফলে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন শ্রীলঙ্কার বর্তমান বিরোধী দলের নেতা সজিথ প্রেমাদাসা। দশ লাখ ভোটের মধ্যে তিনি পেয়েছেন প্রায় ২২ শতাংশ। এরপরেই রয়েছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।

এর আগে শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভোট শেষে রাতেই গণনা শুরু হয়। দেশের এক কোটি ৭০ লাখ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ এবারের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

২০২২ সালের ১৩ জুলাই গণ-বিক্ষোভের মুখে শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসে সরকারের পতন হয়। দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। ওই ঘটনার সপ্তাহখানেক পর বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে।

গণ-বিক্ষোভের দুই বছর পর অনুষ্ঠিত এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে নানাদিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই নির্বাচনে তিন ডজনেরও বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আলোচনায় রয়েছেন হাতে গোনা কয়েক জন।

শ্রীলঙ্কায় শনিবার স্থানীয় সকাল ৭টায় ভোট শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় গণনা। এর মধ্যেই দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে প্রশাসন। ‘জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা’ করেই শনিবার সন্ধ্যায় আট ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে এখন পর্যন্ত বড় কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। এবারের নির্বাচনকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচন বলে মন্তব্য করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।

শনিবার সারারাত ভোট গণনা চলেছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। গোনা শেষে রোববার দুপুরের পর নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। পৌনে দুই কোটি ভোটারের মধ্যে এবারের নির্বাচনে প্রায় ৭৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮৩ দশমিক ৭২ শতাংশ।

টানা দেড় দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা রাজাপাকসে পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থনৈতিক দুঃশাসন, ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভিন্নমত দমনের ব্যাপক অভিযোগ ছিল। রাজাপাকসে সরকারের কয়েকটি নীতির কারণে দেশটিতে চরম অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গণ-আন্দোলনের মুখে ২০২২ সালে দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তন আসে।

বিক্ষোভের মুখে পালালেও দেড় মাস পর পুনরায় দেশে ফেরেন ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে।
ক্ষমতা ছাড়ার মাত্র ৫০ দিন পর সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড হয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। ফিরে আসার পর তাকে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিলাসবহুল বাংলো, নিরাপত্তাসহ রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে তিনি অংশ গ্রহণ না করলেও রাজাপাকসে পরিবারের আরেক সদস্য নামাল রাজাপাকসে প্রার্থী হয়েছেন। যদিও তাকে নিয়ে মানুষের মধ্যে সেভাবে আলোচনা হতে দেখা যাচ্ছে না।

শ্রীলঙ্কার এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মূলত তিনজন প্রার্থী বেশি আলোচনায় রয়েছেন। এরা হলেন- ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার অ্যাল্যায়েন্সর প্রার্থী অনুরা কুমারা দিসানায়েক, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী রনিল বিক্রমাসিংহে এবং বিরোধীদল সঙ্গী জন বালাওয়াগার (এসজেবি) প্রার্থী সজিথ প্রেমাদাসা।

ধারণা করা হচ্ছে, তাদের তিনজনের মধ্যে থেকেই একজন শ্রীলঙ্কার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন। রোববার সকাল পর্যন্ত বামপন্থী জোটের প্রার্থী অনুরা কুমারা দিসানায়েককেই সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে।

দিসানায়েকে একজন মার্ক্সবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত। তার দল বিমুক্তি পেরেমুনা (জেভিপি) ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোটের বড় শরিক দল। নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে সঙ্গী জন বালাওয়েগার (এসজেবি) নেতা সজিথ প্রেমাদাসাকে।

প্রেমাদাসা শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রমাদাসার ছেলে। দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলাকালে ১৯৯৩ সালে সাবেক ওই প্রেসিডেন্ট আততায়ীর হাতে নিহত হন। এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেও। রাজাপাকসা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভোটাভুটির মাধ্যমে তাকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেয় শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

বামপন্থি জোট এগিয়ে শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে

আপডেট: ০৯:২৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শ্রীলঙ্কায় গণ-বিক্ষোভের মুখে রাজাপাকসে সরকারের পতনের পর অনুষ্ঠিত প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে এগিয়ে রয়েছেন দেশটির বামপন্থি ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) অ্যালায়েন্সের প্রার্থী অনুরা কুমারা দিসানায়েক। রোববার সকাল পর্যন্ত গণনা শেষ হওয়া দশ লাখ ভোটের মধ্যে দিসানায়েকে প্রায় ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বলে শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রাথমিক ফলাফলে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন শ্রীলঙ্কার বর্তমান বিরোধী দলের নেতা সজিথ প্রেমাদাসা। দশ লাখ ভোটের মধ্যে তিনি পেয়েছেন প্রায় ২২ শতাংশ। এরপরেই রয়েছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।

এর আগে শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভোট শেষে রাতেই গণনা শুরু হয়। দেশের এক কোটি ৭০ লাখ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ এবারের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

২০২২ সালের ১৩ জুলাই গণ-বিক্ষোভের মুখে শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসে সরকারের পতন হয়। দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। ওই ঘটনার সপ্তাহখানেক পর বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে।

গণ-বিক্ষোভের দুই বছর পর অনুষ্ঠিত এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে নানাদিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই নির্বাচনে তিন ডজনেরও বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আলোচনায় রয়েছেন হাতে গোনা কয়েক জন।

শ্রীলঙ্কায় শনিবার স্থানীয় সকাল ৭টায় ভোট শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় গণনা। এর মধ্যেই দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে প্রশাসন। ‘জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা’ করেই শনিবার সন্ধ্যায় আট ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে এখন পর্যন্ত বড় কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। এবারের নির্বাচনকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচন বলে মন্তব্য করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।

শনিবার সারারাত ভোট গণনা চলেছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। গোনা শেষে রোববার দুপুরের পর নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। পৌনে দুই কোটি ভোটারের মধ্যে এবারের নির্বাচনে প্রায় ৭৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮৩ দশমিক ৭২ শতাংশ।

টানা দেড় দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা রাজাপাকসে পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থনৈতিক দুঃশাসন, ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভিন্নমত দমনের ব্যাপক অভিযোগ ছিল। রাজাপাকসে সরকারের কয়েকটি নীতির কারণে দেশটিতে চরম অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গণ-আন্দোলনের মুখে ২০২২ সালে দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তন আসে।

বিক্ষোভের মুখে পালালেও দেড় মাস পর পুনরায় দেশে ফেরেন ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে।
ক্ষমতা ছাড়ার মাত্র ৫০ দিন পর সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড হয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। ফিরে আসার পর তাকে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিলাসবহুল বাংলো, নিরাপত্তাসহ রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে তিনি অংশ গ্রহণ না করলেও রাজাপাকসে পরিবারের আরেক সদস্য নামাল রাজাপাকসে প্রার্থী হয়েছেন। যদিও তাকে নিয়ে মানুষের মধ্যে সেভাবে আলোচনা হতে দেখা যাচ্ছে না।

শ্রীলঙ্কার এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মূলত তিনজন প্রার্থী বেশি আলোচনায় রয়েছেন। এরা হলেন- ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার অ্যাল্যায়েন্সর প্রার্থী অনুরা কুমারা দিসানায়েক, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী রনিল বিক্রমাসিংহে এবং বিরোধীদল সঙ্গী জন বালাওয়াগার (এসজেবি) প্রার্থী সজিথ প্রেমাদাসা।

ধারণা করা হচ্ছে, তাদের তিনজনের মধ্যে থেকেই একজন শ্রীলঙ্কার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন। রোববার সকাল পর্যন্ত বামপন্থী জোটের প্রার্থী অনুরা কুমারা দিসানায়েককেই সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে।

দিসানায়েকে একজন মার্ক্সবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত। তার দল বিমুক্তি পেরেমুনা (জেভিপি) ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোটের বড় শরিক দল। নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে সঙ্গী জন বালাওয়েগার (এসজেবি) নেতা সজিথ প্রেমাদাসাকে।

প্রেমাদাসা শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রমাদাসার ছেলে। দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলাকালে ১৯৯৩ সালে সাবেক ওই প্রেসিডেন্ট আততায়ীর হাতে নিহত হন। এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেও। রাজাপাকসা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভোটাভুটির মাধ্যমে তাকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেয় শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট।