০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

সংবিধান বাতিলের দাবি তুললেন সমন্বয়ক হাসনাত

  • আপডেট: ০৩:১৩:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
  • 37

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবি জানানোর একদিন না যেতেই এবার দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যমান সংবিধান বাতিলের দাবি তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

শনিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া কনভেনশন হলের ঈগল হলে ‘বৈষম্যমুক্ত সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশ ২.০ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রূপরেখা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তোলেন তিনি।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যে সংবিধান আমাদের একটা ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা উপহার দিয়েছে, সেই সংবিধান বিদ্যমান রেখে আমরা বিডিআর বিদ্রোহ থেকে শুরু করে ওই সরকারের আমলে যত অপশাসন হয়েছে, সেগুলোর বিচার নিশ্চিতের আশা করতে পারি না। সুতরাং দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করে দিয়ে অবশ্যই আবার সংবিধান পুনর্গঠন করতে হবে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনো সংবিধান মেনে আসেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকার হয়তো ভুলে গেছে, তারা বিপ্লবী সরকার। এ সরকারে যারা রয়েছেন তারা কোনো সংবিধান বা নিয়ম মেনে আসেনি। সুতরাং, এই ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা বিলোপ করার জন্য সংবিধানের দোহাই দেওয়া হলে তারা পুরো জাতিকে হতাশ করবে।

হাসনাত বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, প্রতিটি পদক্ষেপে মানুষ অনুভব করবে এ সরকার বিপ্লবী সরকার। আজ ৫ সেপ্টেম্বর। আজ নতুন সরকারের দুই মাস হলো। কিন্তু আজ অবধি আমরা সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত কোনো পদক্ষেপ দেখিনি।

তিনি বলেন, আন্দোলন চলাকালে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সেখানে সরকারের বিভিন্ন অন্যায়ের করা সমালোচনা করা হয়। আমরা তখন আত্মগোপনে ছিলাম। অনলাইনে সবাইকে একত্রিত করার চেষ্টা করছিলাম।

সেসময়ে জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের পদক্ষেপ দেখে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। একইভাবে ৫ আগস্টের পরে জাতীয়ভাবে এ সরকারের প্রতি আস্থা তৈরি করতে সরকারের কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। তার মধ্যে বিচার নিশ্চিত করা অন্যতম।

সংবাদ সম্মেলনে দেশের প্রধান সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এরও সংস্কার দাবি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় এ সমন্বয়। তিনি বলেন, ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ায় পুলিশ তাদের পোশাক পরিবর্তনের দাবি করেছে।

তারা সংস্কারে এ দাবি করেছে। আমি মনে করি, ডিজিএফআই-এর পক্ষ থেকে বক্তব্য আসা উচিত যে তাদেরও সংস্কার প্রয়োজন। তা না হলে অতীতে যে ঘটনাগুলো তারা ঘটিয়েছে, সেগুলোর দায় তাদের নিতে হবে।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, পাসপোর্ট করতে গেলে ডিজিএফআই, স্কুলে ডিজিএফআই, আন্দোলন দমনে ডিজিএফআই, বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিজিএফআই! আসলে ডিজিএফআই-এর কী কাজ?

তিনি বলেন, আমি সেদিন রিপোর্ট দেখলাম, মেজর জেনারেল জিয়া ও তারেক সিদ্দিকী র’-এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। একটি সার্বভৌম দেশে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের প্রভাব কত বেশি ছিল যে র’-এর অফিস ক্যান্টনমেন্টের মধ্যেও ছিল। অবশ্যই এ বিষয়গুলো সেনাবাহিনী জানত। সুতরাং, এতদিন পর্যন্ত যে নিশ্চুপ ছিলেন, কিন্তু এখন অজু করে সাধু হয়ে যাবেন, সে সুযোগটি নেই।

আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে এ সমন্বয়ক বলেন, আওয়ামী লীগ যতদিন পর্যন্ত মাফ না চায়, বিচার নিশ্চিত করে এবং যতদিন না পর্যন্ত জনতা সিদ্ধান্ত নেয় ততদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পাবলিক একসেস আমরা ছাত্র-জনতা দেব না।

তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের আমলে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল, তারা মূলত ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের হয়েই কাজ করেছিল। দ্রুততম সময়ে বিগত এই তিনটি সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। যেহেতু তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, সেহেতু তাদের রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দিতে হবে। যারা এই তিনটি সংসদে সদস্য ছিল, তাদের সদস্যপদ অবৈধ করার পাশাপাশি তারা যে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে সেগুলো ফেরত দিতে হবে।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবি জানান সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

সংবিধান বাতিলের দাবি তুললেন সমন্বয়ক হাসনাত

আপডেট: ০৩:১৩:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবি জানানোর একদিন না যেতেই এবার দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যমান সংবিধান বাতিলের দাবি তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

শনিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া কনভেনশন হলের ঈগল হলে ‘বৈষম্যমুক্ত সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশ ২.০ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রূপরেখা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তোলেন তিনি।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যে সংবিধান আমাদের একটা ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা উপহার দিয়েছে, সেই সংবিধান বিদ্যমান রেখে আমরা বিডিআর বিদ্রোহ থেকে শুরু করে ওই সরকারের আমলে যত অপশাসন হয়েছে, সেগুলোর বিচার নিশ্চিতের আশা করতে পারি না। সুতরাং দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করে দিয়ে অবশ্যই আবার সংবিধান পুনর্গঠন করতে হবে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনো সংবিধান মেনে আসেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকার হয়তো ভুলে গেছে, তারা বিপ্লবী সরকার। এ সরকারে যারা রয়েছেন তারা কোনো সংবিধান বা নিয়ম মেনে আসেনি। সুতরাং, এই ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা বিলোপ করার জন্য সংবিধানের দোহাই দেওয়া হলে তারা পুরো জাতিকে হতাশ করবে।

হাসনাত বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, প্রতিটি পদক্ষেপে মানুষ অনুভব করবে এ সরকার বিপ্লবী সরকার। আজ ৫ সেপ্টেম্বর। আজ নতুন সরকারের দুই মাস হলো। কিন্তু আজ অবধি আমরা সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত কোনো পদক্ষেপ দেখিনি।

তিনি বলেন, আন্দোলন চলাকালে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সেখানে সরকারের বিভিন্ন অন্যায়ের করা সমালোচনা করা হয়। আমরা তখন আত্মগোপনে ছিলাম। অনলাইনে সবাইকে একত্রিত করার চেষ্টা করছিলাম।

সেসময়ে জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের পদক্ষেপ দেখে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। একইভাবে ৫ আগস্টের পরে জাতীয়ভাবে এ সরকারের প্রতি আস্থা তৈরি করতে সরকারের কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। তার মধ্যে বিচার নিশ্চিত করা অন্যতম।

সংবাদ সম্মেলনে দেশের প্রধান সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এরও সংস্কার দাবি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় এ সমন্বয়। তিনি বলেন, ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ায় পুলিশ তাদের পোশাক পরিবর্তনের দাবি করেছে।

তারা সংস্কারে এ দাবি করেছে। আমি মনে করি, ডিজিএফআই-এর পক্ষ থেকে বক্তব্য আসা উচিত যে তাদেরও সংস্কার প্রয়োজন। তা না হলে অতীতে যে ঘটনাগুলো তারা ঘটিয়েছে, সেগুলোর দায় তাদের নিতে হবে।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, পাসপোর্ট করতে গেলে ডিজিএফআই, স্কুলে ডিজিএফআই, আন্দোলন দমনে ডিজিএফআই, বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিজিএফআই! আসলে ডিজিএফআই-এর কী কাজ?

তিনি বলেন, আমি সেদিন রিপোর্ট দেখলাম, মেজর জেনারেল জিয়া ও তারেক সিদ্দিকী র’-এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। একটি সার্বভৌম দেশে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের প্রভাব কত বেশি ছিল যে র’-এর অফিস ক্যান্টনমেন্টের মধ্যেও ছিল। অবশ্যই এ বিষয়গুলো সেনাবাহিনী জানত। সুতরাং, এতদিন পর্যন্ত যে নিশ্চুপ ছিলেন, কিন্তু এখন অজু করে সাধু হয়ে যাবেন, সে সুযোগটি নেই।

আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে এ সমন্বয়ক বলেন, আওয়ামী লীগ যতদিন পর্যন্ত মাফ না চায়, বিচার নিশ্চিত করে এবং যতদিন না পর্যন্ত জনতা সিদ্ধান্ত নেয় ততদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পাবলিক একসেস আমরা ছাত্র-জনতা দেব না।

তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের আমলে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল, তারা মূলত ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের হয়েই কাজ করেছিল। দ্রুততম সময়ে বিগত এই তিনটি সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। যেহেতু তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, সেহেতু তাদের রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দিতে হবে। যারা এই তিনটি সংসদে সদস্য ছিল, তাদের সদস্যপদ অবৈধ করার পাশাপাশি তারা যে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে সেগুলো ফেরত দিতে হবে।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবি জানান সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।