০৫:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

জন্মস্থানে ফিরতে বিএসএফের গুলিতে নিহত ‘ভারতীয় নাগরিক’

  • আপডেট: ০৫:২৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪
  • 71

জীবনের শেষ সময়টুকু বাংলাদেশে স্বজনদের সঙ্গে কাটাতে চেয়েছিলেন বৈবাহিক সূত্রে ভারতীয় নাগরিক ইস্তাফন খাতুন (৬৪)। কিন্তু জন্মস্থানে ফেরা হলো না তার।

গত রোববার (৩০ জুন) মধ্যরাতে মেহেরপুরের নবীনগর খালপাড়া সীমান্তের ১১৬ নাম্বার মেইন পিলারের কাছে কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টাকালে ভারতের নাটনা বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে ইস্তাফনকে। পরে তার মরদেহ নিয়ে যায় তারা।

ইস্তাফন খাতুনের বড় ভাই হাসেম আলী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বুড়িপোতা বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার মন মোহন বলেন, ঘটনাটি ভারতের অভ্যন্তরে ঘটেছে। তাই এ বিষয়ে বিএসএফ আমাদের কিছুই জানায়নি।

ইস্তাফন খাতুন মেহেরপুর সদর উপজেলার শালিকা গ্রামের মৃত কোমর আলীর মেয়ে।

তার বড় ভাই হাসেম আলী বলেন, ৩০ বছর আগে আমার বোন ভারতে পাড়ি জমায়। দেশটির বিহারের বাসিন্দা রহমত আলীর সঙ্গে বিয়ে করে সেখানে বসবাস করে আসছিল। সে ওই দেশের নাগরিক হয়েছে। কিছু দিন আগে তার স্বামী রহমত আলী মারা গেছে। স্বামী মারা যাওয়ার পর ইস্তাফন খাতুন একাকি জীবন কাটাচ্ছিল। কয়েক সপ্তাহ আগে সীমান্তের কাঁটাতার পার হয়ে আমাদের বাড়িতে কয়েক সপ্তাহ থেকে আবারও ফিরে গেছে সেখানে। ওখানে তার দেখাশোনার কেউ নেই। সেজন্য বাকি জীবনটা আমাদের পরিবারে সঙ্গে কাটানোর কথা ছিল তার।

হাসেম আলী জানান, স্বজনদের কাছে স্থায়ীভাবে ফিরতে তিন দিন ধরে সীমান্তের ওপারে ভারতের নদীয়া জেলার তেহট্র থানার নবীনগরে অবস্থান করছিলেন ইস্তাফন। রোববার দিবাগত রাতে এ দেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে তার শেষ কথা হয় মোবাইল ফোনে। বলেছিলেন, সুযোগ পেলেই কাঁটাতার পেরিয়ে চলে আসবেন।

হাসেম আলী বলেন, মধ্যরাতে খবর পাই কাঁটাতার পেরিয়ে অনুপ্রবেশকালে বাংলাদেশি ভেবে তাকে নাটনা বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা ভারতের অভ্যন্তরে গুলি করে হত্যা করে। পরে তার মরদেহ নদীয়া জেলার তেহট্র থানার ৮৪ নং বিএসএফ ব্যাটালিয়নের নাটনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

বোনের মৃত্যুর খবরে সীমান্তে ছুটে গিয়েও তার মরদেহের দেখা মেলেনি জানিয়ে হাসেম আরও বলেন, জীবনের শেষ সময়টুকু কাটাতে চেয়েছিল পরিবারে ভাই-বোনদের সঙ্গে। সে আশায় গত দেড় বছর যাবত চেষ্টা করেও আসতে পারেনি নিজ দেশে।

ইস্তাফনের ভাতিজা বিপ্লব হোসেন জানান, গত তিন দিন ধরে ওপারের নবীনগর গ্রামের একটি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তার ফুপু। ফোনকলে তার সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয়। পরে ভারত থেকে মোবাইল ফোনে জানতে পারেন, বিএসএফের গুলিতে মারা গেছেন ইস্তাফন। লাশ ফিরে পেতে তারা বুড়িপোতা বিজিবি ক্যাম্পে যোগাযোগ করেন। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরে ঘটনাটি ঘটায় বিজিবি কোনোভাবে মরদেহ পাওয়ার আশা দিতে পারেনি।

বুড়িপোতা বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার মন মোহন বলেন, খালপাড়া সীমান্তে নারীর নিহত হওয়ার ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরে ঘটেছে। এ বিষয়ে বিএসএফ আমাদের কিছু জানায়নি। নিহত নারীর জন্ম বাংলাদেশে, তার ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা সীমান্তবর্তী গ্রাম শালিকাতে বসবাস করেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের কাছে অবৈধভাবে আসতে গিয়েই এই ঘটনা ঘটেছে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

জন্মস্থানে ফিরতে বিএসএফের গুলিতে নিহত ‘ভারতীয় নাগরিক’

আপডেট: ০৫:২৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪

জীবনের শেষ সময়টুকু বাংলাদেশে স্বজনদের সঙ্গে কাটাতে চেয়েছিলেন বৈবাহিক সূত্রে ভারতীয় নাগরিক ইস্তাফন খাতুন (৬৪)। কিন্তু জন্মস্থানে ফেরা হলো না তার।

গত রোববার (৩০ জুন) মধ্যরাতে মেহেরপুরের নবীনগর খালপাড়া সীমান্তের ১১৬ নাম্বার মেইন পিলারের কাছে কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টাকালে ভারতের নাটনা বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে ইস্তাফনকে। পরে তার মরদেহ নিয়ে যায় তারা।

ইস্তাফন খাতুনের বড় ভাই হাসেম আলী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বুড়িপোতা বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার মন মোহন বলেন, ঘটনাটি ভারতের অভ্যন্তরে ঘটেছে। তাই এ বিষয়ে বিএসএফ আমাদের কিছুই জানায়নি।

ইস্তাফন খাতুন মেহেরপুর সদর উপজেলার শালিকা গ্রামের মৃত কোমর আলীর মেয়ে।

তার বড় ভাই হাসেম আলী বলেন, ৩০ বছর আগে আমার বোন ভারতে পাড়ি জমায়। দেশটির বিহারের বাসিন্দা রহমত আলীর সঙ্গে বিয়ে করে সেখানে বসবাস করে আসছিল। সে ওই দেশের নাগরিক হয়েছে। কিছু দিন আগে তার স্বামী রহমত আলী মারা গেছে। স্বামী মারা যাওয়ার পর ইস্তাফন খাতুন একাকি জীবন কাটাচ্ছিল। কয়েক সপ্তাহ আগে সীমান্তের কাঁটাতার পার হয়ে আমাদের বাড়িতে কয়েক সপ্তাহ থেকে আবারও ফিরে গেছে সেখানে। ওখানে তার দেখাশোনার কেউ নেই। সেজন্য বাকি জীবনটা আমাদের পরিবারে সঙ্গে কাটানোর কথা ছিল তার।

হাসেম আলী জানান, স্বজনদের কাছে স্থায়ীভাবে ফিরতে তিন দিন ধরে সীমান্তের ওপারে ভারতের নদীয়া জেলার তেহট্র থানার নবীনগরে অবস্থান করছিলেন ইস্তাফন। রোববার দিবাগত রাতে এ দেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে তার শেষ কথা হয় মোবাইল ফোনে। বলেছিলেন, সুযোগ পেলেই কাঁটাতার পেরিয়ে চলে আসবেন।

হাসেম আলী বলেন, মধ্যরাতে খবর পাই কাঁটাতার পেরিয়ে অনুপ্রবেশকালে বাংলাদেশি ভেবে তাকে নাটনা বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা ভারতের অভ্যন্তরে গুলি করে হত্যা করে। পরে তার মরদেহ নদীয়া জেলার তেহট্র থানার ৮৪ নং বিএসএফ ব্যাটালিয়নের নাটনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

বোনের মৃত্যুর খবরে সীমান্তে ছুটে গিয়েও তার মরদেহের দেখা মেলেনি জানিয়ে হাসেম আরও বলেন, জীবনের শেষ সময়টুকু কাটাতে চেয়েছিল পরিবারে ভাই-বোনদের সঙ্গে। সে আশায় গত দেড় বছর যাবত চেষ্টা করেও আসতে পারেনি নিজ দেশে।

ইস্তাফনের ভাতিজা বিপ্লব হোসেন জানান, গত তিন দিন ধরে ওপারের নবীনগর গ্রামের একটি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তার ফুপু। ফোনকলে তার সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয়। পরে ভারত থেকে মোবাইল ফোনে জানতে পারেন, বিএসএফের গুলিতে মারা গেছেন ইস্তাফন। লাশ ফিরে পেতে তারা বুড়িপোতা বিজিবি ক্যাম্পে যোগাযোগ করেন। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরে ঘটনাটি ঘটায় বিজিবি কোনোভাবে মরদেহ পাওয়ার আশা দিতে পারেনি।

বুড়িপোতা বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার মন মোহন বলেন, খালপাড়া সীমান্তে নারীর নিহত হওয়ার ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরে ঘটেছে। এ বিষয়ে বিএসএফ আমাদের কিছু জানায়নি। নিহত নারীর জন্ম বাংলাদেশে, তার ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা সীমান্তবর্তী গ্রাম শালিকাতে বসবাস করেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের কাছে অবৈধভাবে আসতে গিয়েই এই ঘটনা ঘটেছে।