০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
রাসেলস ভাইপার

  আ.লীগ নেতা পুরস্কারের ঘোষণা থেকে সরলেন

  • আপডেট: ০২:২৩:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪
  • 34

রাসেলস ভাইপার’ সাপ জীবিত ধরতে পারলে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। তিনি বলেছেন, জীবিত হোক বা মৃত, কোনো প্রকার রাসেলস ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই।

রোববার (২৩ জুন) দুপুরে নিজের ফেসবুক আইডিতে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট করেন শামীম হক।

তিনি তার পোস্টে বলেন, ‘জীবিত বা মৃত কোনো প্রকার রাসেলস ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই। বর্তমানে রাসেলস ভাইপার একটি আলোচিত বিষয়, পাশাপাশি জনগণের জন্য হুমকি স্বরূপ। এটি অত্যন্ত বিপদজনক বিধায় যে কোনো পুরস্কার বা কৌতূহলবশত এ সাপ নিয়ে অতি উৎসাহী হবেন না। জীবিত বা মৃত কোনো প্রকার রাসেলস ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই। ’

সাপ দেখলে হেল্পলাইনে ফোনকল করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের এ নেতা আরও লিখেছেন, ‘সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন অথবা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করুন। ’

গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতিসভার বিবিধ আলোচনায় শামীম হক ফরিদপুরে রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেন। এসময় সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফ এই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, শুধু কোতোয়ালি থানার মধ্যে কেউ এই সাপ মারতে পারলে তাকে এই টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। আমাদের সভাপতি সাহেব এই টাকা দেবেন।

এ ঘোষণা পরে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। হুলস্থূল কাণ্ড বেঁধে যায় জেলাজুড়ে। আলোচনা তৈরি হয় সারা দেশে।

পুরস্কার পেতে বিভিন্ন জায়গায় সাপ মারার উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে। সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের দুর্গম চরের ৩৮ দাগ এলাকায় গত ২১ জুন সকাল ১১টার দিকে জমিতে ঘাস কাটার সময় একটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পেয়ে সেটি লাঠির আঘাতে মেরে ফেলেন ওই গ্রামের মুরাদ মোল্লা (৪৩) নামে একজন কৃষক। এরপর তিনি সাপটি পদ্মা পাড়ি দিয়ে সিঅ্যান্ডবি ঘাটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু ফকিরের অফিসে নিয়ে আসেন। আবু ফকির তখন সাংবাদিকদের জানান, মুরাদ মোল্লাকে সভাপতির ঘোষিত পুরস্কার দেওয়া হবে।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের এই পুরস্কারের ঘোষণার পর বন বিভাগের পক্ষ থেকে এটি ‘আইনসিদ্ধ নয়’ বলে জানানো হয়।

এরপর অবশ্য ‘মেরে ফেললে পুরস্কার’ দেওয়ার ঘোষণা থেকে সরে এসে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, জীবিত অবস্থায় রাসেলস ভাইপার ধরতে পারলে পুরস্কার দেওয়া হবে।

২১ জুন সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আলী আশরাফ পিয়ার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফরিদপুর সদর উপজেলাধীন কেউ যদি নিজেকে রক্ষাকারী পোশাক সম্বলিত হয়ে এবং সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বনপূর্বক জনস্বার্থে রাসেলস ভাইপার সর্পটি জীবিতাবস্থায় ধরতে পারেন-তবে তাকে ৫০ হাজার টাকায় পুরস্কৃত করা হবে। এরপর আবার জীবিত সাপ ধরার উৎসাহ সৃষ্টি হয়।

পরের দিন গতকাল শনিবার (২২ জুন) সকালে পদ্মার চর থেকে একটি জীবিত রাসেলস ভাইপার সাপ ধরেন রেজাউল নামে এক কৃষক। শনিবার সন্ধ্যায় পাতিলের মধ্যে একটি জীবিত সাপ নিয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে হাজির হন সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের কাদেরের বাজার এলাকার জনৈক রেজাউল নামে ওই ব্যক্তি।

রেজাউল বলেন, সকালে চরের মধ্যে থেকে ধরছি। সাপটা হাইট্যা যাইতেছিল। গায়ের গেঞ্জি ছুঁড়ে ওকে ধরছি। নেতারা পুরস্কার ঘোষণা করছেন। এজন্য রিস্ক নিয়ে ধরছি। এখন বনবিভাগে জমা দিতে আইছি।

তবে রোববার দুপুরে ফরিদপুরের বনবিভাগের অফিসে সাপটি নিয়ে গেলে তাকে সাপসহ ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, এ ধরনের পুরস্কার ঘোষণা করাটাই তো অবৈধ। মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। আমরা এটা প্রমাণ করতে যাবো কেন? ওই কৃষকের উচিৎ হবে যেখান থেকে সাপটি ধরেছে ওই স্থানে ছেড়ে দেওয়া।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

রাসেলস ভাইপার

  আ.লীগ নেতা পুরস্কারের ঘোষণা থেকে সরলেন

আপডেট: ০২:২৩:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪

রাসেলস ভাইপার’ সাপ জীবিত ধরতে পারলে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। তিনি বলেছেন, জীবিত হোক বা মৃত, কোনো প্রকার রাসেলস ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই।

রোববার (২৩ জুন) দুপুরে নিজের ফেসবুক আইডিতে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট করেন শামীম হক।

তিনি তার পোস্টে বলেন, ‘জীবিত বা মৃত কোনো প্রকার রাসেলস ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই। বর্তমানে রাসেলস ভাইপার একটি আলোচিত বিষয়, পাশাপাশি জনগণের জন্য হুমকি স্বরূপ। এটি অত্যন্ত বিপদজনক বিধায় যে কোনো পুরস্কার বা কৌতূহলবশত এ সাপ নিয়ে অতি উৎসাহী হবেন না। জীবিত বা মৃত কোনো প্রকার রাসেলস ভাইপারের জন্য কোনো পুরস্কার নেই। ’

সাপ দেখলে হেল্পলাইনে ফোনকল করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের এ নেতা আরও লিখেছেন, ‘সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন অথবা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করুন। ’

গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতিসভার বিবিধ আলোচনায় শামীম হক ফরিদপুরে রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেন। এসময় সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফ এই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, শুধু কোতোয়ালি থানার মধ্যে কেউ এই সাপ মারতে পারলে তাকে এই টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। আমাদের সভাপতি সাহেব এই টাকা দেবেন।

এ ঘোষণা পরে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। হুলস্থূল কাণ্ড বেঁধে যায় জেলাজুড়ে। আলোচনা তৈরি হয় সারা দেশে।

পুরস্কার পেতে বিভিন্ন জায়গায় সাপ মারার উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে। সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের দুর্গম চরের ৩৮ দাগ এলাকায় গত ২১ জুন সকাল ১১টার দিকে জমিতে ঘাস কাটার সময় একটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পেয়ে সেটি লাঠির আঘাতে মেরে ফেলেন ওই গ্রামের মুরাদ মোল্লা (৪৩) নামে একজন কৃষক। এরপর তিনি সাপটি পদ্মা পাড়ি দিয়ে সিঅ্যান্ডবি ঘাটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু ফকিরের অফিসে নিয়ে আসেন। আবু ফকির তখন সাংবাদিকদের জানান, মুরাদ মোল্লাকে সভাপতির ঘোষিত পুরস্কার দেওয়া হবে।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের এই পুরস্কারের ঘোষণার পর বন বিভাগের পক্ষ থেকে এটি ‘আইনসিদ্ধ নয়’ বলে জানানো হয়।

এরপর অবশ্য ‘মেরে ফেললে পুরস্কার’ দেওয়ার ঘোষণা থেকে সরে এসে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, জীবিত অবস্থায় রাসেলস ভাইপার ধরতে পারলে পুরস্কার দেওয়া হবে।

২১ জুন সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আলী আশরাফ পিয়ার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফরিদপুর সদর উপজেলাধীন কেউ যদি নিজেকে রক্ষাকারী পোশাক সম্বলিত হয়ে এবং সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বনপূর্বক জনস্বার্থে রাসেলস ভাইপার সর্পটি জীবিতাবস্থায় ধরতে পারেন-তবে তাকে ৫০ হাজার টাকায় পুরস্কৃত করা হবে। এরপর আবার জীবিত সাপ ধরার উৎসাহ সৃষ্টি হয়।

পরের দিন গতকাল শনিবার (২২ জুন) সকালে পদ্মার চর থেকে একটি জীবিত রাসেলস ভাইপার সাপ ধরেন রেজাউল নামে এক কৃষক। শনিবার সন্ধ্যায় পাতিলের মধ্যে একটি জীবিত সাপ নিয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে হাজির হন সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের কাদেরের বাজার এলাকার জনৈক রেজাউল নামে ওই ব্যক্তি।

রেজাউল বলেন, সকালে চরের মধ্যে থেকে ধরছি। সাপটা হাইট্যা যাইতেছিল। গায়ের গেঞ্জি ছুঁড়ে ওকে ধরছি। নেতারা পুরস্কার ঘোষণা করছেন। এজন্য রিস্ক নিয়ে ধরছি। এখন বনবিভাগে জমা দিতে আইছি।

তবে রোববার দুপুরে ফরিদপুরের বনবিভাগের অফিসে সাপটি নিয়ে গেলে তাকে সাপসহ ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, এ ধরনের পুরস্কার ঘোষণা করাটাই তো অবৈধ। মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। আমরা এটা প্রমাণ করতে যাবো কেন? ওই কৃষকের উচিৎ হবে যেখান থেকে সাপটি ধরেছে ওই স্থানে ছেড়ে দেওয়া।