০৬:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

কালা মানিকের দাম ১৫ লাখ

  • আপডেট: ০৬:১৭:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪
  • 46

গরুর উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট। প্রায় ৫ বছর বয়সের ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির ওজন এখন ১৩শ কেজি। বড় হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক ও গবেষকের ছোট্ট খামারে। পেয়েছে উপজেলার শ্রেষ্ঠ গরু হওয়ার উপাধিও। মূলত গবেষণার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে বাড়িতে পালা ৯টি গরুর মধ্যে একটি হলো কালা মানিক।

দৈত্যাকার এই কালা মানিকের কাছে গেলেই তাকে আদর করতে হবে। আদর না করলেই অভিমান করে রেগে যায় সে। মুখ দিয়ে বাতাস বের করে আর মাথা দিয়ে ঢিস দিতে এগিয়ে আসে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার নান্দিনা মধু গ্রামের ড. আলী আজম তালুকদার গবেষণার জন্য বাড়িতে ৯টি গরু পালন করছেন। এর মধ্যে ৫-৬টি গরু এবার আসন্ন কোরবানির ঈদে বিক্রি করবেন। ১৩০০ কেজির কালা মানিকের দাম চাওয়া হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। সঙ্গে ফ্রি দেওয়া হবে বাড়িতেই লালন-পালন করা একটি ছাগলও। তবে ক্রেতা গরু কী কারণে কিনবেন এর ওপরে নির্ভর করবে দাম কতটুকু ছাড় দেওয়া হবে।

ওই শিক্ষকের বাড়িতেই তৈরি খামারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালা মানিকসহ গরুগুলোকে পরিচর্যা করছেন ২৪ ঘণ্টা খামারের দেখাশোনা ও পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা পাবনার বুনাইনগর এলাকার রাকিবুল-ময়না দম্পতি। প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করা জমি থেকে ঘাস কেটে এনে সেগুলো প্রস্তুত করছেন ময়না খাতুন। গরুকে গোসল, অন্যান্য খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশন করছেন রাকিবুল। প্রত্যেকটা কাজই ভালোবেসে করছেন তারা।

সেখানে সবার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই কালা মানিককে আনার পর ভালবেসে তাকে প্রথম নাম দেওয়া হয়েছিল গোপাল ভাড়। গরুটি কুচকুচে কালো হওয়ায় পরবর্তীতে মালিক এর নাম রাখেন কালা মানিক।

প্রতিবেশী বয়োজ্যেষ্ঠ জামাল মন্ডল বলেন, কালা মানিককে যদি আদর না করা যায় তাহলে খুব রাগ করে। আগে আমরাও ওকে গোপাল ভাড় বলে ডাকতাম, এখন কালা মানিক বলে ডাকি। এলাকার অনেক মানুষই গরুটা দেখতে আসেন। মূলত শখের বশেই এই খামারের মালিক গরুগুলো পালন করেন বলেও জানান এই বৃদ্ধ।

পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা ময়না খাতুন বলেন, কালা মানিককে আদর যত্ন না করলে খুবই রেগে যায়। আদর যত্ন করলে খুবই খুশি হয়। কালা মানিককে নিজেদের জমিতে চাষ করা প্রাকৃতিক কাঁচা ঘাস, মোটা গমের ভুসি, খৈল, ভুট্টার গুঁড়ো, খুদের ভাত ইত্যাদি খাওয়ানো হয়। অনেক লোকজন কালা মানিককে দেখতে আসে কিন্তু গরুটি বিরক্ত হয় না। বরং তারা এসে আদর করলে খুশি হয়।

খামার ও কালা মানিককে পরিচর্যার প্রধান দায়িত্বে থাকা রাকিবুল ইসলাম বলেন, এখানে মোট ৯টা গরু আছে। এটা বিক্রি করে সামনে বড় একটা খামার করার ইচ্ছা আছে। আমরা কালা মানিককে শুধু স্বাভাবিক খাবার দেই আর আল্লাহর রহমতেই বড় হয়। তাকে আলাদা বিশেষ কোনো খাবার দেওয়া হয় না। অন্যান্য গরুর মতো কালা মানিকেও প্রাকৃতিক খাবারই দেওয়া হয়, শুধু শরীর বড় হওয়ায় পরিমাণে একটু বেশি দিতে হয়। সারাদিন এর সাথেই ভালো সময় কেটে যায়। নিজের মনে করে ভালবেসে তাদের দেখাশোনা করি।

অধ্যাপক ড. আলী আজম তালুকদার  বলেন, আমি শিক্ষকের পাশাপাশি একজন গবেষকও। মূলত আমার পরীক্ষামূলক গবেষণার জন্যই এই গবাদিপশুর খামারটি তৈরি করেছি। এখানে কোনো প্রকার ওষুধ ছাড়াই আমার নিজস্ব গবেষণা প্রক্রিয়ায় দানাদার খাদ্যগুলো পাউডার ফর্মে এনে এরপর ব্যাকটেরিয়া দিয়ে গাঁজানো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখি। সেগুলো ষাঁড়গুলোকে খেতে দেওয়া হয়। এর সঙ্গে দেওয়া হয় কাঁচা ঘাস এবং সাইলেস। আমার চিন্তাধারা সাশ্রয়ী মূল্যে বাংলাদেশের গবাদিপশুকে খাদ্য দেওয়া।

তিনি বলেন, দেশে ২০ কোটি মানুষের প্রতিদিন ৬০ কোটি বার খাবার খেতে হয়। আর এতে সবার পুষ্টিসহ আমিষ ও প্রোটিনের চাহিদা থাকে। সেই বিষয়টি মাথায় নিয়েই প্রাকৃতিক উপায়ে কম খরচে এবং ভেজাল কোনো খাবার না খাইয়েই যেন দ্রুত গবাদিপশু লালন-পালন করা যায় সেটারই চেষ্টা করছি। এছাড়া আমি পান্তা ভাত আর খেজুরের রস দিয়ে পেট্রোল আবিষ্কারেরও কাজ করছি।

অধ্যাপক আলী আজম আরও বলেন, অনেক আদর করে কালা মানিককে লালন-পালন করা হয়েছে। এটি উপজেলা প্রাণী ও পশু প্রদর্শন মেলাতে উপজেলার শ্রেষ্ঠ গরু নির্বাচিত হয়েছিল। তারাই তখন ওজন দিয়ে বলেছিলেন এর ওজন ১৩শ কেজি। এখন হয়তো আরেকটু বেড়েছে।

এই অধ্যাপক আরও বলেন, এ ষাঁড়টিকে বিক্রির জন্য ১৫ লাখ টাকা দাম চেয়েছি। কিন্তু যেহেতু আমি ব্যবসার জন্য খামার দেইনি তাই যিনি কিনবেন তিনি কী কারণে নিচ্ছেন তার ওপরে দাম কমানো হবে। যেমন ধরেন, তিনি যদি কিনে কোরবানি দিয়ে গরিব ও অসহায়দের মাঝে বিতরণ করেন। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পরিমাণ দাম কমিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়াও কালা মানিকের সঙ্গে আমার খামারেই পালন করা একটি ছাগলও ফ্রি দেওয়া হবে।

কামারখন্দ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. ফরহাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, কালা মানিকই এই উপজেলার সবচেয়ে বড় ষাঁড়। এর মালিক তাকে একদম প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে অনেক আদর-যত্নে লালন-পালন করেছেন। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলায় ১ হাজার ৩০০টি খামারে ১১ হাজার গরু এবং ৪৩ হাজার ছাগল ও ভেড়া কোরবানির জন্য তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

কালা মানিকের দাম ১৫ লাখ

আপডেট: ০৬:১৭:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪

গরুর উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট। প্রায় ৫ বছর বয়সের ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির ওজন এখন ১৩শ কেজি। বড় হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক ও গবেষকের ছোট্ট খামারে। পেয়েছে উপজেলার শ্রেষ্ঠ গরু হওয়ার উপাধিও। মূলত গবেষণার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে বাড়িতে পালা ৯টি গরুর মধ্যে একটি হলো কালা মানিক।

দৈত্যাকার এই কালা মানিকের কাছে গেলেই তাকে আদর করতে হবে। আদর না করলেই অভিমান করে রেগে যায় সে। মুখ দিয়ে বাতাস বের করে আর মাথা দিয়ে ঢিস দিতে এগিয়ে আসে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার নান্দিনা মধু গ্রামের ড. আলী আজম তালুকদার গবেষণার জন্য বাড়িতে ৯টি গরু পালন করছেন। এর মধ্যে ৫-৬টি গরু এবার আসন্ন কোরবানির ঈদে বিক্রি করবেন। ১৩০০ কেজির কালা মানিকের দাম চাওয়া হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। সঙ্গে ফ্রি দেওয়া হবে বাড়িতেই লালন-পালন করা একটি ছাগলও। তবে ক্রেতা গরু কী কারণে কিনবেন এর ওপরে নির্ভর করবে দাম কতটুকু ছাড় দেওয়া হবে।

ওই শিক্ষকের বাড়িতেই তৈরি খামারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালা মানিকসহ গরুগুলোকে পরিচর্যা করছেন ২৪ ঘণ্টা খামারের দেখাশোনা ও পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা পাবনার বুনাইনগর এলাকার রাকিবুল-ময়না দম্পতি। প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করা জমি থেকে ঘাস কেটে এনে সেগুলো প্রস্তুত করছেন ময়না খাতুন। গরুকে গোসল, অন্যান্য খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশন করছেন রাকিবুল। প্রত্যেকটা কাজই ভালোবেসে করছেন তারা।

সেখানে সবার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই কালা মানিককে আনার পর ভালবেসে তাকে প্রথম নাম দেওয়া হয়েছিল গোপাল ভাড়। গরুটি কুচকুচে কালো হওয়ায় পরবর্তীতে মালিক এর নাম রাখেন কালা মানিক।

প্রতিবেশী বয়োজ্যেষ্ঠ জামাল মন্ডল বলেন, কালা মানিককে যদি আদর না করা যায় তাহলে খুব রাগ করে। আগে আমরাও ওকে গোপাল ভাড় বলে ডাকতাম, এখন কালা মানিক বলে ডাকি। এলাকার অনেক মানুষই গরুটা দেখতে আসেন। মূলত শখের বশেই এই খামারের মালিক গরুগুলো পালন করেন বলেও জানান এই বৃদ্ধ।

পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা ময়না খাতুন বলেন, কালা মানিককে আদর যত্ন না করলে খুবই রেগে যায়। আদর যত্ন করলে খুবই খুশি হয়। কালা মানিককে নিজেদের জমিতে চাষ করা প্রাকৃতিক কাঁচা ঘাস, মোটা গমের ভুসি, খৈল, ভুট্টার গুঁড়ো, খুদের ভাত ইত্যাদি খাওয়ানো হয়। অনেক লোকজন কালা মানিককে দেখতে আসে কিন্তু গরুটি বিরক্ত হয় না। বরং তারা এসে আদর করলে খুশি হয়।

খামার ও কালা মানিককে পরিচর্যার প্রধান দায়িত্বে থাকা রাকিবুল ইসলাম বলেন, এখানে মোট ৯টা গরু আছে। এটা বিক্রি করে সামনে বড় একটা খামার করার ইচ্ছা আছে। আমরা কালা মানিককে শুধু স্বাভাবিক খাবার দেই আর আল্লাহর রহমতেই বড় হয়। তাকে আলাদা বিশেষ কোনো খাবার দেওয়া হয় না। অন্যান্য গরুর মতো কালা মানিকেও প্রাকৃতিক খাবারই দেওয়া হয়, শুধু শরীর বড় হওয়ায় পরিমাণে একটু বেশি দিতে হয়। সারাদিন এর সাথেই ভালো সময় কেটে যায়। নিজের মনে করে ভালবেসে তাদের দেখাশোনা করি।

অধ্যাপক ড. আলী আজম তালুকদার  বলেন, আমি শিক্ষকের পাশাপাশি একজন গবেষকও। মূলত আমার পরীক্ষামূলক গবেষণার জন্যই এই গবাদিপশুর খামারটি তৈরি করেছি। এখানে কোনো প্রকার ওষুধ ছাড়াই আমার নিজস্ব গবেষণা প্রক্রিয়ায় দানাদার খাদ্যগুলো পাউডার ফর্মে এনে এরপর ব্যাকটেরিয়া দিয়ে গাঁজানো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখি। সেগুলো ষাঁড়গুলোকে খেতে দেওয়া হয়। এর সঙ্গে দেওয়া হয় কাঁচা ঘাস এবং সাইলেস। আমার চিন্তাধারা সাশ্রয়ী মূল্যে বাংলাদেশের গবাদিপশুকে খাদ্য দেওয়া।

তিনি বলেন, দেশে ২০ কোটি মানুষের প্রতিদিন ৬০ কোটি বার খাবার খেতে হয়। আর এতে সবার পুষ্টিসহ আমিষ ও প্রোটিনের চাহিদা থাকে। সেই বিষয়টি মাথায় নিয়েই প্রাকৃতিক উপায়ে কম খরচে এবং ভেজাল কোনো খাবার না খাইয়েই যেন দ্রুত গবাদিপশু লালন-পালন করা যায় সেটারই চেষ্টা করছি। এছাড়া আমি পান্তা ভাত আর খেজুরের রস দিয়ে পেট্রোল আবিষ্কারেরও কাজ করছি।

অধ্যাপক আলী আজম আরও বলেন, অনেক আদর করে কালা মানিককে লালন-পালন করা হয়েছে। এটি উপজেলা প্রাণী ও পশু প্রদর্শন মেলাতে উপজেলার শ্রেষ্ঠ গরু নির্বাচিত হয়েছিল। তারাই তখন ওজন দিয়ে বলেছিলেন এর ওজন ১৩শ কেজি। এখন হয়তো আরেকটু বেড়েছে।

এই অধ্যাপক আরও বলেন, এ ষাঁড়টিকে বিক্রির জন্য ১৫ লাখ টাকা দাম চেয়েছি। কিন্তু যেহেতু আমি ব্যবসার জন্য খামার দেইনি তাই যিনি কিনবেন তিনি কী কারণে নিচ্ছেন তার ওপরে দাম কমানো হবে। যেমন ধরেন, তিনি যদি কিনে কোরবানি দিয়ে গরিব ও অসহায়দের মাঝে বিতরণ করেন। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পরিমাণ দাম কমিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়াও কালা মানিকের সঙ্গে আমার খামারেই পালন করা একটি ছাগলও ফ্রি দেওয়া হবে।

কামারখন্দ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. ফরহাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, কালা মানিকই এই উপজেলার সবচেয়ে বড় ষাঁড়। এর মালিক তাকে একদম প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে অনেক আদর-যত্নে লালন-পালন করেছেন। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলায় ১ হাজার ৩০০টি খামারে ১১ হাজার গরু এবং ৪৩ হাজার ছাগল ও ভেড়া কোরবানির জন্য তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।